রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীতে ভেসে অস্বচ্ছল, দরিদ্র ও নদী পাড়ের মানুষের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র স্থল হয়ে উঠেছে ইম্প্যাক্ট ‘জীবনতরী’ ভাসমান হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে অল্প টাকায় হাতের কাছে উন্নত চিকিৎসা পেয়ে খুশি নদী ভাঙন ক্ষতিগ্রস্থ স্বল্প আয়ের মানুষ।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার সোনাকান্দর গ্রামের মৌলভী ঘাট পদ্মা নদীর তীরে ৩মাসের অধিক সময় ধরে চিকিৎসা প্রদান করায় ‘জীবনতরী’র জেলায় সাধারণ মানুষের কাছে সাড়া ফেলেছে। হাসপাতালে প্রতিদিনই স্বাস্থ্যসেবা নিতে ভিড় করছে শত শত মানুষ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত ১৮ই জানুয়ারী থেকে বে-সরকারি সংস্থা ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পরিচালনায় ভাসমান হাসপাতালটি পদ্মা নদীর তীরে নোঙর করে চিকিৎসা কার্যক্রম প্রদান করে আসছে। তিন তলা বিশিষ্ট ইম্প্যাক্ট ‘জীবনতরী’ ভাসমান হাসপাতালটি পদ্মা নদীর সোনাকান্দর মৌলভীর ঘাটে নোঙর করা হয়েছে। নদীর পাড়ে টিকিট কাউন্টার। রোগীরা মাত্র ৫০ টাকা মূল্যের টিকিট সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছে। শুক্রবার ব্যতিত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রোগী দেখেন চিকিৎসকরা।
জীবনতরী ভাসমান হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালটির ভেতরে একটি পরিপূর্ণ চিকিৎসা কেন্দ্রেরই সবই স্বল্প পরিসরে আছে। হাসপাতালের ভিতরের বা পাশে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জায়গা। ভাসমান ৩তলা বিশিষ্টি হাসপাতালের নিচতলায় রয়েছে চিকিৎসকের চেম্বার, প্যাথলজি ও এক্স-রে কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার ও রোগী থাকার বেড। তৃতীয় তলায় একপাশে ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার ও অন্যপাশে ফাঁকা। ছাদের ওপরে টিনের ছাউনি দেওয়া।
জানা গেছে, হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে চক্ষু রোগের চিকিৎসা ও ছানি অপারেশন করা হয়। রোগীর চাহিদা অনুযায়ী লেন্স সংযোজন ও ফ্যাকো সার্জারির ব্যবস্থা রয়েছে। এই হাসপাতালে নাক-কান-গলা রোগের চিকিৎসা ও অপারেশন করা হয়। এছাড়া জন্মগত মুগুর-পা, বাঁকা-পা, ঠোটকাটা, তালুকাটা রোগের অপারেশন করা হয়। অর্থোপেডিক সমস্যাজনিত শারীরিক ব্যথা, মাজা ব্যাথা, মাথা ব্যাথাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়। ১২ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ৩জন মেডিকেল অফিসার, ৩জন নার্স, ৭জন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টসহ মোট ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৪ ঘন্টা অবস্থান করে। এছাড়াও জরুরী রোগীদের জন একটি এ্যাম্বুলেন্স সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী বলেন, বেসরকারী ক্লিনিকে রোগী দেখাতে গেলে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা চিকিৎসকদের ভিজিট দিতে হয়। কিন্তু মাত্র ৫০ টাকায় টিকিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসদের নিকট থেকে সেবা গ্রহণ করা যাচ্ছে। এ ধরনের সেবা রাজবাড়ী বাসীর সাধারণ রোগীদের জন্য অতি প্রয়োজন।
ইম্প্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালের প্রশাসক একেএম শহিদুল হক বলেন, মানবতার সেবা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। নদ-নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ বেশিরভাগই তুলনামূলক দরিদ্র হয়। তাদের পক্ষে বেশি টাকা খরচ করে শহরে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা নেওয়া কঠিন, তাই তাদের সুবিধার্থে আমরা স্বল্প মূল্য চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি।
তিনি আরো বলেন, রাজবাড়ীর এই সোনাকান্দরে গত ১৮ই জানুয়ারী হতে অদ্যবদী পর্যন্ত ৩মাসে প্রায় ১০ হাজার রোগীকে এই পর্যন্ত সেবা দিয়েছি। প্রথমে রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও এখন প্রতিদিন ১শত এর বেশী রোগীকেসেবা দিচ্ছি। রাজবাড়ীসহ পাবনা, সুনামগঞ্জ, মাদারীপুর বরিশাল থেকেও সেবা নিতে আসছে রোগীরা। এক এক এলাকায় দুই থেকে ৬ মাস আমরা অবস্থান করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকি।’