ঢাকা ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এখন কই যামু জানি না!

ধরলার নদী ভাঙনে খাস জমি হারিয়ে নিঃস্ব আয়নাল হক

কুড়িগ্রাম: ধরলা নদী ভাঙনে শেষ ঠিকানা বসত বাড়ীর খাস জমিও টুকু হারিয়ে নিঃস্ব দিন মুজুর বৃদ্ধ আয়নাল হক (৮২)।

ধরলার ভাঙনে শেষ ঠিকানা বসত বাড়ীর খাস জমিও গেলো, এখন কই যামু জানি না ! একটা পরোটা খেয়ে অর্ধেক দিন পাড় করছেন। এমন নির্মম করুন পরিনিতির স্বীকার হয়েছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চরগোরকমন্ডল গ্রামের মৃত এন্তাজ আলীর ছেলে দিন মুজুর বৃদ্ধ আয়নাল হক (৮২)। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে চরম দুচিন্তায় দিন পাড় করছেন তিনি।

আগ্রাসী ধরলার পানি বৃদ্ধি ও তীব্র ভাঙনে ফুলবাড়ী উপজেলার চরগোরকমন্ডল গ্রামের নদী পাড়ের বাড়ী, ভিটা-মাটি বিলীন হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে খাস জমির উপর ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে ফেলার কাজও শেষ করেছে বৃদ্ধ আয়নাল হক। কিন্তু কোথায় হবে তার মাথা গোঁজার ঠিকানা। মৃত্যুর কাছাকাছি সময় এসে এমন কঠিন সময় পাড় করবেন জীবনেও ভাবেনি।

জানা গেছে, টানা চারদিন থেকে টিনের চালায় অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে দিন পাড় করছেন আয়নাল হক। বৃদ্ধ আয়নাল হক স্ত্রী আম্বিয়া বেগমসহ দুই জনের সংসার। আগে দিন মজুরী করে সংসার চালালেও এখন বয়সের ভারে দিন মজুরী কাজ ছেড়ে দেন। বাড়ীতেই সামান্য পূজির ছোট একনা দোকান করেই অতিকষ্টে খেয়ে না খেয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

আরো জানা গেছে, তার এ বেঁচে থাকার জীবন যুদ্ধে ঘর-বাড়ীসহ তিন থেকে ৪ বার ধরলার ভাঙনে সব কিছুই হারিয়ে চরম দু’দিন পাড় করেছেন। নিজস্ব জমি-জমা না থাকায় সরকারী খাস জমিদের থাকতেন। সেই খাস জমিও ধরলা নদীর পেটে যাচ্ছে। বর্তমানে মানুষের দয়ায় কোন রকমেই এক বেলা খেয়ে না খেয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করলেও কোথায় মাথা গোঁজার ঠাই টুকুও কোথায় জুটবে এ নিয়ে চরম দুচিন্তায় পড়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ীর উঠানে নিজের হাতে রোপনকৃত কাঁঠাল গাছ স্পর্শ করে ফ্যাল ফ্যাল করে নির্বাক দৃষ্টিতে ধরলার দিকে তাকিয়ে আছেন আশি ঊর্দ্ধ বছরের বৃদ্ধ আয়নাল হক। আয়নাল হককে কথা হলে তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, কি কবো বাহে, খাস জমিও গেলো, এখন কোথায় যামু জানি না। শেষ স্মৃতি আমার হাতে রোপনকৃত এই কাঁঠাল গাছটির বড় মায়া হচ্ছে। অনেক কাঁঠাল ধরেছে। মনে এই কাঁঠাল গাছটি রক্ষা করতে পারলাম না বাহে। তোমরাতো স্বচোখে দেখলেন ধরলা নদী আমার বাড়ীর কাছে এসে বাড়ী-ভিটা গিলতে শুরু করেছে। পানি কমলেও এখনও নদীতে তীব্র স্রোেত। দুই দিন আগে বাড়ীর-ঘরগুলো বেড়া চাটি খুলে দিয়েছে। এক দিকে স্রোেত অন্য দিকে ভাঙন যেকোন মুহুর্তে আমার বাড়ী ভিটাটুকু বিলীন হয়ে যাবে। এখন কি করবো বুঝতেছি না বাহে। নিজের বাড়ী-ঘর ও জমি-জমা ধরলায় বিলীন হলেও অন্যের বাড়ী-ঘর ও ফসলি জমি যাতে নদী গর্ভে বিলীন না হয় সেজন্য তিনি অশ্রুকন্ঠে দ্রুত চরগোরকমন্ডল এলাকায় ধরলার ভাঙন ঠেকাতে একটি টেকসই বাঁধ নির্মানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হাছেন আলী জানান, বর্তমানে ধরলার ভাঙনে হুমকির মূখে ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মুজিব কেল্লার ভবন, স্কুল, মাদ্রসাসহ ওই এলাকার প্রায় হাজারো পরিবার। চরগোরকমন্ডল এলাকার আয়নাল হকের বাড়ীসহ গত এক থেকে দেড় বছরে ধরলার তীব্র ভাঙনে ৫০ টি পরিবার ও আঁধা কিলোমিটার সড়কসহ কয়েকশত বিঘা ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নদীর ভাঙন রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পানি উন্নয়ন বোডর্কে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহ স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধের জোড় দাবী জানিয়েছেন। সেই সাথে ভাঙনের শিকার অসহায় দিন মজুর আয়নাল হককে সব ধরণের সহযোগীতা করা আশ্বাস দেন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ ইসমত ত্বোহা জানান, চর-গোরকমন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙন ঠেকাতে ৬/৭ হাজার জিওব্যাগ ফেলানো হয়েছে। আসলে জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করা সম্ভব না। ভাঙন রোধে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ দেওয়ার জন্য কয়েক দফায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারপরেও ভাঙন রোধ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ অব্যহত আছে।

অসহায় আঁশি ঊর্দ্ধ বছরের বৃদ্ধ আয়নাল হকের সহায়তার বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনমা তারান্নুম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে সহায়তা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

এক গুচ্ছ কদম হাতে

এখন কই যামু জানি না!

ধরলার নদী ভাঙনে খাস জমি হারিয়ে নিঃস্ব আয়নাল হক

আপডেট সময় ০৬:৫৮:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪

ধরলার ভাঙনে শেষ ঠিকানা বসত বাড়ীর খাস জমিও গেলো, এখন কই যামু জানি না ! একটা পরোটা খেয়ে অর্ধেক দিন পাড় করছেন। এমন নির্মম করুন পরিনিতির স্বীকার হয়েছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চরগোরকমন্ডল গ্রামের মৃত এন্তাজ আলীর ছেলে দিন মুজুর বৃদ্ধ আয়নাল হক (৮২)। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে চরম দুচিন্তায় দিন পাড় করছেন তিনি।

আগ্রাসী ধরলার পানি বৃদ্ধি ও তীব্র ভাঙনে ফুলবাড়ী উপজেলার চরগোরকমন্ডল গ্রামের নদী পাড়ের বাড়ী, ভিটা-মাটি বিলীন হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে খাস জমির উপর ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে ফেলার কাজও শেষ করেছে বৃদ্ধ আয়নাল হক। কিন্তু কোথায় হবে তার মাথা গোঁজার ঠিকানা। মৃত্যুর কাছাকাছি সময় এসে এমন কঠিন সময় পাড় করবেন জীবনেও ভাবেনি।

জানা গেছে, টানা চারদিন থেকে টিনের চালায় অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে দিন পাড় করছেন আয়নাল হক। বৃদ্ধ আয়নাল হক স্ত্রী আম্বিয়া বেগমসহ দুই জনের সংসার। আগে দিন মজুরী করে সংসার চালালেও এখন বয়সের ভারে দিন মজুরী কাজ ছেড়ে দেন। বাড়ীতেই সামান্য পূজির ছোট একনা দোকান করেই অতিকষ্টে খেয়ে না খেয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

আরো জানা গেছে, তার এ বেঁচে থাকার জীবন যুদ্ধে ঘর-বাড়ীসহ তিন থেকে ৪ বার ধরলার ভাঙনে সব কিছুই হারিয়ে চরম দু’দিন পাড় করেছেন। নিজস্ব জমি-জমা না থাকায় সরকারী খাস জমিদের থাকতেন। সেই খাস জমিও ধরলা নদীর পেটে যাচ্ছে। বর্তমানে মানুষের দয়ায় কোন রকমেই এক বেলা খেয়ে না খেয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করলেও কোথায় মাথা গোঁজার ঠাই টুকুও কোথায় জুটবে এ নিয়ে চরম দুচিন্তায় পড়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ীর উঠানে নিজের হাতে রোপনকৃত কাঁঠাল গাছ স্পর্শ করে ফ্যাল ফ্যাল করে নির্বাক দৃষ্টিতে ধরলার দিকে তাকিয়ে আছেন আশি ঊর্দ্ধ বছরের বৃদ্ধ আয়নাল হক। আয়নাল হককে কথা হলে তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, কি কবো বাহে, খাস জমিও গেলো, এখন কোথায় যামু জানি না। শেষ স্মৃতি আমার হাতে রোপনকৃত এই কাঁঠাল গাছটির বড় মায়া হচ্ছে। অনেক কাঁঠাল ধরেছে। মনে এই কাঁঠাল গাছটি রক্ষা করতে পারলাম না বাহে। তোমরাতো স্বচোখে দেখলেন ধরলা নদী আমার বাড়ীর কাছে এসে বাড়ী-ভিটা গিলতে শুরু করেছে। পানি কমলেও এখনও নদীতে তীব্র স্রোেত। দুই দিন আগে বাড়ীর-ঘরগুলো বেড়া চাটি খুলে দিয়েছে। এক দিকে স্রোেত অন্য দিকে ভাঙন যেকোন মুহুর্তে আমার বাড়ী ভিটাটুকু বিলীন হয়ে যাবে। এখন কি করবো বুঝতেছি না বাহে। নিজের বাড়ী-ঘর ও জমি-জমা ধরলায় বিলীন হলেও অন্যের বাড়ী-ঘর ও ফসলি জমি যাতে নদী গর্ভে বিলীন না হয় সেজন্য তিনি অশ্রুকন্ঠে দ্রুত চরগোরকমন্ডল এলাকায় ধরলার ভাঙন ঠেকাতে একটি টেকসই বাঁধ নির্মানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হাছেন আলী জানান, বর্তমানে ধরলার ভাঙনে হুমকির মূখে ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মুজিব কেল্লার ভবন, স্কুল, মাদ্রসাসহ ওই এলাকার প্রায় হাজারো পরিবার। চরগোরকমন্ডল এলাকার আয়নাল হকের বাড়ীসহ গত এক থেকে দেড় বছরে ধরলার তীব্র ভাঙনে ৫০ টি পরিবার ও আঁধা কিলোমিটার সড়কসহ কয়েকশত বিঘা ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নদীর ভাঙন রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পানি উন্নয়ন বোডর্কে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহ স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধের জোড় দাবী জানিয়েছেন। সেই সাথে ভাঙনের শিকার অসহায় দিন মজুর আয়নাল হককে সব ধরণের সহযোগীতা করা আশ্বাস দেন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ ইসমত ত্বোহা জানান, চর-গোরকমন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙন ঠেকাতে ৬/৭ হাজার জিওব্যাগ ফেলানো হয়েছে। আসলে জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করা সম্ভব না। ভাঙন রোধে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ দেওয়ার জন্য কয়েক দফায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারপরেও ভাঙন রোধ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ অব্যহত আছে।

অসহায় আঁশি ঊর্দ্ধ বছরের বৃদ্ধ আয়নাল হকের সহায়তার বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনমা তারান্নুম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে সহায়তা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।