ঢাকা ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo পাংশার মাছপাড়ায় মহানাম যজ্ঞানুষ্ঠান Logo পাংশা মডেল থানার ওসি সালাউদ্দিনের সাথে রিপোর্টার্স ইউনিটির সৌজন্য সাক্ষাৎ Logo কালুখালীতে বিএনপি’র উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস পালিত Logo রাজবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস পালিত Logo জনতা ব্যাংক পিএলসি’র উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস পালিত Logo রাজবাড়ীতে শুদ্ধ বাংলা সংগীত রক্ষা পরিষদের শ্রদ্ধা নিবেদন Logo বাংলাদেশ ভূমি অফিসার কল্যাণ সমিতি রাজবাড়ী জেলা শাখার উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস পালিত Logo মহান বিজয় দিবসে রাজবাড়ী রিপোর্টার্স ইউনিটির শ্রদ্ধা নিবেদন Logo যথাযোগ্য মর্যাদায় ডা: আবুল হোসেন কলেজে মহান বিজয় দিবস পালিত Logo ডা: আবুল হোসেন কলেজে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত
বৌভাতে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

আমতলীতে সেতু ভেঙ্গে মাইক্রোবাস খালে; নিহত ৯

বরগুনা: আমতলীতে সেতু ভেঙ্গে মাইক্রোবাস খালে; একই পরিবারের সাত নারী সহ ৯জন নিহত।

বরগুনার আমতলী উপজেলাতে মাইক্রোবাস যোগে বৌভাতে যাওয়ার সময় লোহার সেতু ধসে মাইক্রোবাস খালে পড়ে একই পরিবারের ৭জন সহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ৪জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও এখনো ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে।

২২শে জুন, শনিবার দুপুরে উপজেলার হলদিয়া-চাওড়া সীমান্তবর্তী চাওড়া হলদিয়া খালের ওপর লোহার সেতু ভেঙে খালে পড়ে এ মর্মান্তিক দূর্ঘটনাটি ঘটে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটিতে আগে থেকেই টাঙানো ছিল সতর্কীকরণ নোটিশ।

জানা গেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামের মনির হাওলাদারের মেয়ে হুমায়রা বেগমের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার। ওই অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে শনিবার দুপুর দেড় টার সময় তারা মাইক্রোবাস যোগে আমতলী আসছিল। পথিমধ্যে মাইক্রেটি হলদিয়া বাজার সংলগ্ন লোহার সেতু পার হওয়ার সময় মাঝ বরাবর ভেঙ্গে কচুরিপানায় ভরা খালে পরে তলিয়ে যায়। মাইক্রোবাসটি খালে পরে যাওয়া শব্দ পেয়ে স্থানীয়রা উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসে। মুশল ধারে বৃষ্টি এবং খালে নেমে উদ্ধারের কোন সুযোগ না থাকায় উদ্ধার কাজে বিলম্ব ঘটনায় অনেকেই তখন পানিতেই প্রাণ হরারন। মাক্রোবাসটি পানির উপরে তোলার এর মধ্যে থেকে বেড়িয়ে আসে একের পর এক নারী শিশুসহ ৯টি লাশ। ৪জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৩জন।

নিহতদের মধ্যে ৭ জন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার সাবেক সেনা সদস্য মাহাবুবুর রহমান সবুজের পরিবারের সদস্য। মাহাবুব তার খালাতো বোনের বিয়েতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছেন। অপর দুজন আমতলীর দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া এলাকার জহিরুল ইসলামের স্ত্রী ও মেয়ে। তারাও মাহাবুবের আত্মীয়।

নিহতরা হলেন- মাহাবুবের ভাই সোহেলের স্ত্রী রাইতি (৩০), সোহেলের শাশুড়ি রুমি বেগম (৪০), মাহাবুবের মা ফরিদা বেগম (৪০), মামি মুন্নি বেগম (৪০), মুন্নি বেগমের মেয়ে তাহিয়া (৭), তাসদিয়া (১১), আরেক মামি ফাতেমা বেগম (৪০), আমতলীর দক্ষিণ তক্তাবুনিয়ার জহিরুল ইসলামের স্ত্রী জাকিয়া এবং মেয়ে রিদি (৫)। জীবিত উদ্ধার হওয়া ৪জন হলেন মাহাবুব খান, সোহেল খান, সুমা আক্তার ও দীশা আক্তার তারা সবাই শরিয়তপুরের বাসিন্দা।

জীবিত উদ্ধার হওয়া মাহবুব খান বলেন, শুক্রবার আমরা ভাগ্নি হুমায়রা বেগমের বাড়ি হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামে যাই। সেখান  থেকে একটি হাইএস মাইক্রোবাস যোগে আজ শনিবার দুপুর ১টার সময়  ভাগ্নি জামাইর আমতলীর বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রওয়ানা করি। দুপুর দেড় টার সময় হলদিয়া বাজার সংলগ্ন একটি লোহার সেতু পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাসটি মাঝ বরাবর আসার পর আকস্মিক সেতুটির ২০ ফুট ধরে ধসে মাইক্রোবাস সহ কচুরি পানায় ভর্তি খালে পরে যায়। এর পর আর কিছুই বলতে পারি না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে । আল্লায় মোগো বাচাইলেও সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে।

স্থানীয় হলদিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম সোহেল বলেন, সেতু ভেঙ্গে মাইক্রোটি খালে পরে যাওয়ার পর আমরা খবর পেয়ে দ্রুত উদ্ধার কাজে নেমে পরি। ৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও ৯জনের সলিল সমাধি ঘটে। এত বড় দুর্ঘটনা এবং এতগুলো লাশ আমার জীবনেও আমি আর দেখি নাই।

দুর্ঘটনার পর খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।  আবহাওয়া এবং মুশলধারে বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজ কিছুটা বিলম্ব হয়।

ঘটনার খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডেভোকেট এম কাদের, আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আমির হোসেন সেরনিয়াবাদ ওসি শাখওয়াত হোসেন তপু ঘটনাস্থলে থেকে উদ্ধার কাজ তদারকি করেন।

দূর্ঘটনার খবর পেয়ে বরগুনার সংসদস্য সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু বিকেলে আমতলী হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে নিহতদের পরিবারের সান্তনা দেন এবং সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

এদিকে দুর্ঘটনার খবর গ্রামের বাড়িতে পৌছালে শোকের মাতম উঠে বাড়িতে। শোকে স্তদ্ধ হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। এলাকাবাসী এসে ভিড় জমায় মাহাবুবুর রহমান সবুজের বাড়িতে।

নিহত ফাতেমা বেগমের স্বামী বাবুল মাদবর বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। ওরা বিয়ের আনন্দ করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরছে। এই দুঃখ আমি কোথায় রাখি।’

নিহত ফরিদা বেগমের ছেলে মাহাবুব খান ফোনে বলেন, ‘আমরা বুধবার এসে শুক্রবার বিয়ে হয়। আজ বৌভাগে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে।

শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বেপারী বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েই বাড়িতে এসেছি। আসলে এতো বড় দূর্ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। এখন তাদের মরদেহ বাড়িতে আনা হচ্ছে। রবিবার সকাল ৯টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’

জনপ্রিয় সংবাদ

পাংশার মাছপাড়ায় মহানাম যজ্ঞানুষ্ঠান

বৌভাতে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

আমতলীতে সেতু ভেঙ্গে মাইক্রোবাস খালে; নিহত ৯

আপডেট সময় ০৮:৫৫:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪

বরগুনার আমতলী উপজেলাতে মাইক্রোবাস যোগে বৌভাতে যাওয়ার সময় লোহার সেতু ধসে মাইক্রোবাস খালে পড়ে একই পরিবারের ৭জন সহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ৪জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও এখনো ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে।

২২শে জুন, শনিবার দুপুরে উপজেলার হলদিয়া-চাওড়া সীমান্তবর্তী চাওড়া হলদিয়া খালের ওপর লোহার সেতু ভেঙে খালে পড়ে এ মর্মান্তিক দূর্ঘটনাটি ঘটে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটিতে আগে থেকেই টাঙানো ছিল সতর্কীকরণ নোটিশ।

জানা গেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামের মনির হাওলাদারের মেয়ে হুমায়রা বেগমের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার। ওই অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে শনিবার দুপুর দেড় টার সময় তারা মাইক্রোবাস যোগে আমতলী আসছিল। পথিমধ্যে মাইক্রেটি হলদিয়া বাজার সংলগ্ন লোহার সেতু পার হওয়ার সময় মাঝ বরাবর ভেঙ্গে কচুরিপানায় ভরা খালে পরে তলিয়ে যায়। মাইক্রোবাসটি খালে পরে যাওয়া শব্দ পেয়ে স্থানীয়রা উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসে। মুশল ধারে বৃষ্টি এবং খালে নেমে উদ্ধারের কোন সুযোগ না থাকায় উদ্ধার কাজে বিলম্ব ঘটনায় অনেকেই তখন পানিতেই প্রাণ হরারন। মাক্রোবাসটি পানির উপরে তোলার এর মধ্যে থেকে বেড়িয়ে আসে একের পর এক নারী শিশুসহ ৯টি লাশ। ৪জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৩জন।

নিহতদের মধ্যে ৭ জন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার সাবেক সেনা সদস্য মাহাবুবুর রহমান সবুজের পরিবারের সদস্য। মাহাবুব তার খালাতো বোনের বিয়েতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছেন। অপর দুজন আমতলীর দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া এলাকার জহিরুল ইসলামের স্ত্রী ও মেয়ে। তারাও মাহাবুবের আত্মীয়।

নিহতরা হলেন- মাহাবুবের ভাই সোহেলের স্ত্রী রাইতি (৩০), সোহেলের শাশুড়ি রুমি বেগম (৪০), মাহাবুবের মা ফরিদা বেগম (৪০), মামি মুন্নি বেগম (৪০), মুন্নি বেগমের মেয়ে তাহিয়া (৭), তাসদিয়া (১১), আরেক মামি ফাতেমা বেগম (৪০), আমতলীর দক্ষিণ তক্তাবুনিয়ার জহিরুল ইসলামের স্ত্রী জাকিয়া এবং মেয়ে রিদি (৫)। জীবিত উদ্ধার হওয়া ৪জন হলেন মাহাবুব খান, সোহেল খান, সুমা আক্তার ও দীশা আক্তার তারা সবাই শরিয়তপুরের বাসিন্দা।

জীবিত উদ্ধার হওয়া মাহবুব খান বলেন, শুক্রবার আমরা ভাগ্নি হুমায়রা বেগমের বাড়ি হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামে যাই। সেখান  থেকে একটি হাইএস মাইক্রোবাস যোগে আজ শনিবার দুপুর ১টার সময়  ভাগ্নি জামাইর আমতলীর বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রওয়ানা করি। দুপুর দেড় টার সময় হলদিয়া বাজার সংলগ্ন একটি লোহার সেতু পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাসটি মাঝ বরাবর আসার পর আকস্মিক সেতুটির ২০ ফুট ধরে ধসে মাইক্রোবাস সহ কচুরি পানায় ভর্তি খালে পরে যায়। এর পর আর কিছুই বলতে পারি না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে । আল্লায় মোগো বাচাইলেও সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে।

স্থানীয় হলদিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম সোহেল বলেন, সেতু ভেঙ্গে মাইক্রোটি খালে পরে যাওয়ার পর আমরা খবর পেয়ে দ্রুত উদ্ধার কাজে নেমে পরি। ৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও ৯জনের সলিল সমাধি ঘটে। এত বড় দুর্ঘটনা এবং এতগুলো লাশ আমার জীবনেও আমি আর দেখি নাই।

দুর্ঘটনার পর খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।  আবহাওয়া এবং মুশলধারে বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজ কিছুটা বিলম্ব হয়।

ঘটনার খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডেভোকেট এম কাদের, আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আমির হোসেন সেরনিয়াবাদ ওসি শাখওয়াত হোসেন তপু ঘটনাস্থলে থেকে উদ্ধার কাজ তদারকি করেন।

দূর্ঘটনার খবর পেয়ে বরগুনার সংসদস্য সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু বিকেলে আমতলী হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে নিহতদের পরিবারের সান্তনা দেন এবং সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

এদিকে দুর্ঘটনার খবর গ্রামের বাড়িতে পৌছালে শোকের মাতম উঠে বাড়িতে। শোকে স্তদ্ধ হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। এলাকাবাসী এসে ভিড় জমায় মাহাবুবুর রহমান সবুজের বাড়িতে।

নিহত ফাতেমা বেগমের স্বামী বাবুল মাদবর বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। ওরা বিয়ের আনন্দ করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরছে। এই দুঃখ আমি কোথায় রাখি।’

নিহত ফরিদা বেগমের ছেলে মাহাবুব খান ফোনে বলেন, ‘আমরা বুধবার এসে শুক্রবার বিয়ে হয়। আজ বৌভাগে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে।

শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বেপারী বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েই বাড়িতে এসেছি। আসলে এতো বড় দূর্ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। এখন তাদের মরদেহ বাড়িতে আনা হচ্ছে। রবিবার সকাল ৯টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’