ঢাকা ০৯:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
অবহেলা ও সরকারি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়

রাজবাড়ীর হাসপাতাল সড়ক যেন মৃত্যু ফাঁদ

রাজবাড়ীর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিককৃত জেলা সদর হাসপাতালের সামনের সড়ক এখন শুধু একটি রাস্তা নয়, যেন এক ভয়াবহ মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। খানাখন্দে ভরা, কর্দমাক্ত ও জলাবদ্ধ এ রাস্তায় প্রতিদিনই রিকশা, ইজিবাইক, ভ্যান উল্টে ঘটছে মর্মান্তিক দূর্ঘটনা; আহত হচ্ছেন যাত্রী ও পথচারীরা।

ভুক্তভোগীদের দাবী, রাজবাড়ীর পাবলিক হেলথ মোড় থেকে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৬৭৫ মিটার দীর্ঘ এ সড়কের প্রতিটি ইঞ্চি এখন জনভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। এখন হাসপাতাল সড়কের জরুরী ভাবে উন্নত মেরামতের প্রয়োজন।

জানা গেছে, সড়কটির পাশেই রয়েছে রাজবাড়ীর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল, একাধিক বে-সরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, নার্সিং ইনষ্টিটিউট, মসজিদ ও ডজন খানেক সরকারি অফিস। অথচ এ পথেই দৈনন্দিন চলাফেরা করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শিশু, নারী, বৃদ্ধ এবং রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সের যাত্রীরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির মৌসুমে সড়ক চলাচলরত ভুক্তভোগীদের সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। সড়কের কোথাও পিচ উঠে গিয়ে শুধু কাদা, কোথাও আবার পাথর নেই, শুধু মাটি। রাস্তায় হাঁটলে বা গাড়ি চালালে বোঝা যায় না কোথায় গর্ত আছে, কারণ তা পানিতে ঢাকা থাকে। জলাবদ্ধতা ও ড্রেনেজ সমস্যায় রাস্তা কোথাও হাঁটু সমান পানিতে ডুবে যাচ্ছে। কোথাও আবার গর্তের ভিতর হারিয়ে যাচ্ছে গাড়ির চাকা। পাশে থাকা ড্রেনগুলো বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় সেগুলো প্রায় বন্ধ। ময়লা-আবর্জনা ও পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ড্রেনের পানি সড়কে উঠে এসে ঘরবাড়িতেও ঢুকছে।

মঙ্গলবার দুপুরে কাজীকান্দা সেগুনবাগিচা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় বাঁশ ও কাঠ দিয়ে এলাকাবাসী চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। বিপজ্জনক গর্তগুলোতে লাল কাপড় দিয়ে সতর্কতার চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। অনেক পথচারী এবং গাড়িচালক বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে ঘুরে চলাচল করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আহমেদ আলী বলেন, “এই রাস্তা দিয়েই তো মানুষ হাসপাতালে যায়। কিন্তু রাস্তাটার এমন দশা যে, কখন কোথায় চাকা পড়ে উল্টে যাবে, বোঝা যায় না। একাধিকবার দেখি রিকশা উল্টে গিয়ে রক্তাক্ত যাত্রীকে স্থানীয়রাই হাসপাতালে নিয়েছে।”

সড়কে চলাচলরত মোটরসাইকেল চালক শফিকুল ইসলাম জানান, “প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বিশেষ করে রাতে এসব গর্ত দেখা যায় না। একবার পড়ে গেলে মাথায় সোজা ইটের ঘা।”

সুজন শেখ নামের একজন বলেন, “দুই-তিন বছর ধরে রাস্তার এমন দশা। ড্রেনের পানি গড়িয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। বড় বড় ট্রাক গেলে নিচের খোয়া উঠে গেছে, কেবল কাদা আর গর্ত।”

স্থানীয় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা আর আশ্বাস চাই না, কাজ চাই। রাস্তা যদি দ্রুত মেরামত না হয়, তাহলে বড় দুর্ঘটনা অনিবার্য। প্রতিবছর সামান্য মেরামত করেই দায় শেষ করে দেওয়া হয়, অথচ স্থায়ী সমাধান নেই।

রাজবাড়ী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল আজিজ খান জানান, “হাসপাতাল রোড, এতিমখানা রোড ও পান্না চত্বর থেকে তালতলা পর্যন্ত সড়কের জন্য আমরা একটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ওয়ান ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নযোগ্য এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। চলতি মাসেই এটি অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে, এরপর টেন্ডার আহ্বান করব।” তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্পের আওতায় রাস্তা আরসিসি দিয়ে নির্মাণ করা হবে এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থাও উন্নয়ন করা হবে। এতে জনগণের ভোগান্তি অনেকটাই লাঘব হবে।”

রাজবাড়ীর হাসপাতাল রোড এখন শুধুমাত্র এক টুকরো ভাঙা রাস্তা নয়, এটি হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের কষ্ট, প্রতিবাদ ও অবহেলার একটি প্রতীক। প্রতিদিনের দুর্ভোগ, বারবারের দুর্ঘটনা এবং প্রশাসনিক নিশ্চুপতার ফলে জনগণের মাঝে হতাশা বাড়ছে। দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে জনজীবন পুরোপুরি অচল হয়ে পড়বে এটি এখন সময়ের দাবি নয়, প্রয়োজন।
ট্যাগস :

এক গুচ্ছ কদম হাতে

অবহেলা ও সরকারি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়

রাজবাড়ীর হাসপাতাল সড়ক যেন মৃত্যু ফাঁদ

আপডেট সময় ০৫:২১:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

রাজবাড়ীর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিককৃত জেলা সদর হাসপাতালের সামনের সড়ক এখন শুধু একটি রাস্তা নয়, যেন এক ভয়াবহ মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। খানাখন্দে ভরা, কর্দমাক্ত ও জলাবদ্ধ এ রাস্তায় প্রতিদিনই রিকশা, ইজিবাইক, ভ্যান উল্টে ঘটছে মর্মান্তিক দূর্ঘটনা; আহত হচ্ছেন যাত্রী ও পথচারীরা।

ভুক্তভোগীদের দাবী, রাজবাড়ীর পাবলিক হেলথ মোড় থেকে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৬৭৫ মিটার দীর্ঘ এ সড়কের প্রতিটি ইঞ্চি এখন জনভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। এখন হাসপাতাল সড়কের জরুরী ভাবে উন্নত মেরামতের প্রয়োজন।

জানা গেছে, সড়কটির পাশেই রয়েছে রাজবাড়ীর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল, একাধিক বে-সরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, নার্সিং ইনষ্টিটিউট, মসজিদ ও ডজন খানেক সরকারি অফিস। অথচ এ পথেই দৈনন্দিন চলাফেরা করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শিশু, নারী, বৃদ্ধ এবং রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সের যাত্রীরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির মৌসুমে সড়ক চলাচলরত ভুক্তভোগীদের সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। সড়কের কোথাও পিচ উঠে গিয়ে শুধু কাদা, কোথাও আবার পাথর নেই, শুধু মাটি। রাস্তায় হাঁটলে বা গাড়ি চালালে বোঝা যায় না কোথায় গর্ত আছে, কারণ তা পানিতে ঢাকা থাকে। জলাবদ্ধতা ও ড্রেনেজ সমস্যায় রাস্তা কোথাও হাঁটু সমান পানিতে ডুবে যাচ্ছে। কোথাও আবার গর্তের ভিতর হারিয়ে যাচ্ছে গাড়ির চাকা। পাশে থাকা ড্রেনগুলো বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় সেগুলো প্রায় বন্ধ। ময়লা-আবর্জনা ও পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ড্রেনের পানি সড়কে উঠে এসে ঘরবাড়িতেও ঢুকছে।

মঙ্গলবার দুপুরে কাজীকান্দা সেগুনবাগিচা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় বাঁশ ও কাঠ দিয়ে এলাকাবাসী চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। বিপজ্জনক গর্তগুলোতে লাল কাপড় দিয়ে সতর্কতার চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। অনেক পথচারী এবং গাড়িচালক বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে ঘুরে চলাচল করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আহমেদ আলী বলেন, “এই রাস্তা দিয়েই তো মানুষ হাসপাতালে যায়। কিন্তু রাস্তাটার এমন দশা যে, কখন কোথায় চাকা পড়ে উল্টে যাবে, বোঝা যায় না। একাধিকবার দেখি রিকশা উল্টে গিয়ে রক্তাক্ত যাত্রীকে স্থানীয়রাই হাসপাতালে নিয়েছে।”

সড়কে চলাচলরত মোটরসাইকেল চালক শফিকুল ইসলাম জানান, “প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বিশেষ করে রাতে এসব গর্ত দেখা যায় না। একবার পড়ে গেলে মাথায় সোজা ইটের ঘা।”

সুজন শেখ নামের একজন বলেন, “দুই-তিন বছর ধরে রাস্তার এমন দশা। ড্রেনের পানি গড়িয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। বড় বড় ট্রাক গেলে নিচের খোয়া উঠে গেছে, কেবল কাদা আর গর্ত।”

স্থানীয় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা আর আশ্বাস চাই না, কাজ চাই। রাস্তা যদি দ্রুত মেরামত না হয়, তাহলে বড় দুর্ঘটনা অনিবার্য। প্রতিবছর সামান্য মেরামত করেই দায় শেষ করে দেওয়া হয়, অথচ স্থায়ী সমাধান নেই।

রাজবাড়ী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল আজিজ খান জানান, “হাসপাতাল রোড, এতিমখানা রোড ও পান্না চত্বর থেকে তালতলা পর্যন্ত সড়কের জন্য আমরা একটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ওয়ান ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নযোগ্য এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। চলতি মাসেই এটি অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে, এরপর টেন্ডার আহ্বান করব।” তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্পের আওতায় রাস্তা আরসিসি দিয়ে নির্মাণ করা হবে এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থাও উন্নয়ন করা হবে। এতে জনগণের ভোগান্তি অনেকটাই লাঘব হবে।”

রাজবাড়ীর হাসপাতাল রোড এখন শুধুমাত্র এক টুকরো ভাঙা রাস্তা নয়, এটি হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের কষ্ট, প্রতিবাদ ও অবহেলার একটি প্রতীক। প্রতিদিনের দুর্ভোগ, বারবারের দুর্ঘটনা এবং প্রশাসনিক নিশ্চুপতার ফলে জনগণের মাঝে হতাশা বাড়ছে। দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে জনজীবন পুরোপুরি অচল হয়ে পড়বে এটি এখন সময়ের দাবি নয়, প্রয়োজন।