রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে পদ্মা নদীর পানি। পানি বৃদ্ধি ও স্রোত বাড়তে থাকায় দৌলতদিয়া ৭নং ফেরী ঘাট এলাকার সাত্তার মেম্বার পাড়া এলাকার শতাধিক পরিবার নদী ভাঙন আতঙ্কে দিন পাড় করছে।
একদিকে শুরু হয়েছে পদ্মা নদী ভাঙন, অন্য দিকে দ্রুত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে কৃষি ফসল। এতে পদ্মা পাড়ের মানুষের সোনালী স্বপ্ন ভেঙ্গে হারিয়ে নিঃস্ব হতে বসেছে।
জানা গেছে, পদ্মার উজানে গত কয়েক দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড়ি ঢলের পানি পদ্মার বুকে গড়িয়ে আসায় পদ্মার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
সরেজমিনে পদ্মা নদীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া ও উজানচর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এতে ওই সব এলাকার ফসলি জমির তিল, চিনা বাদাম, ধান, পাটসহ নানা ধরনের ফসল ডুবতে শুরু করেছে। কৃষকরা আধা কাঁচা তিল ও চিনা বাদাম তুলে নিচ্ছেন।
এছাড়াও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বেপারি পাড়ার কৃষক মো: তোফাজ্জল বেপারী, সুজন হাসান, ওয়াজেদ আলী মৃধা, হায়াত আলী মৃধা, সুমন শেখ প্রমুখ কৃষককে নৌকা করে আধা কাঁচা তিল কেটে নিতে দেখা গেছে। কৃষকরা আধা কাঁচা ফসল কেটে ঘরে তুলছে। কৃষি ফসলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এ অঞ্চলে ধীরে ধীরে পানি বাড়ছে। তবে গত দু’দিন ধরে আশঙ্কাজনক হারে পানি বাড়তে থাকায় বন্যা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ সময় কৃষকরা বলেন, আর মাত্র ২ সপ্তাহ সময় পেলে তিলগুলো পুরাপুরি পেকে যেত। প্লাবিত হওয়ার কারণে দুই সপ্তাহ আগেই কাটতে হচ্ছে।
দৌলতদিয়া ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্তার মেম্বর পাড়ায় ৭ নম্বর ফেরিঘাটের পাশে কিষাণ-কৃষাণীকে চিনা বাদাম ক্ষেতে পানি ঢোকার কারণে অপরিপক্ব বাদাম তুলে বাছাই করতে দেখা যায়। এসময় তারা জানান, আরো ১৫ দিন পরে এই ফসলগুলো তুলতে পারলে দ্বিগুণ ফলন পাওয়া যেত। নদীর পানি ঢুকে পড়ায় তাড়াতাড়ি তুলে আনা হয়েছে।
কৃষকরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, উজানের ঢলে গত দু’দিনে পদ্মার পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে অল্প সময়ে বাড়ি-ঘরে পানি উঠতে পারে। ছাত্তার মেম্বর পাড়ায় ৬ ও ৭ নম্বর ঘাটের ভাঙনও ভয়্ঙ্কর রূপ নিতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৌলতদিয়া পয়েন্টের গেজ পাঠক সালমা খাতুন জানান, শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার এ পয়েন্টে ৩০ সেঃমিঃ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে, ২৪ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে ৪০ সেঃমিঃ পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। পদ্মায় বর্তমানে ৬ দশমিক ২০ মিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ পয়েন্টে পানির স্বাভাবিক স্তর ৭ দশমিক ৯০ মিটার।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, এপ্রিল মাস থেকে পদ্মার এ পয়েন্টে পানি বাড়া শুরু হয়। জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়লেও এক সপ্তাহ পর তা কমতে থাকে। এরপর ১৮ জুন থেকে আবার দ্রুতগতিতে পদ্মার পানি বাড়ছে।