“মা ইলিশ রক্ষায় সরকার যে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেই কষ্ট লাঘব করতেই নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে চাল বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা চাই, ভবিষ্যতে এই সহায়তার পরিমাণ আরও বাড়ানো হোক। মৎস্য সম্পদ বাঁচাতে হলে জেলেদের পাশে দাঁড়াতে হবে,” জেলেদের মাঝে ভিজিএফ’র চাল বিতরণ অনুষ্ঠানে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. প্লাবন আলী এ কথা বলেন।
গত রবিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে ৬১৩ জন নিবন্ধিত জেলের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো: প্লাবন আলী।
জেলেদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।
এ কর্মসূচির উদ্বোধন তিনি আরো বলেন, জেলেরা চাল পেয়ে খুশি হলেও ভবিষ্যতে সহায়তার পরিমাণ বাড়ানোর প্রত্যাশা করছে। আমরা চাই, শুধু চাল নয়, অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীরও ব্যবস্থা করা হোক। সরকারের এই উদ্যোগে আমরা আশাবাদী যে মৎস্য সম্পদ সুরক্ষিত থাকবে।
চাল বিতরণ কার্যক্রমে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলা মৎস্য অফিসের ফিল্ড অফিসার মো: ইয়াকুব আলী, ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আছিয়া বেগম, বানু বেগম, ইউপি সদস্য শফি মন্ডল, আকবর হোসেন, কুরবান আলী মোল্লা প্রমুখ।
চরনারায়ণপুর গ্রামের জেলে মো: শাহিন মন্ডল বলেন, “চাল তো পাইছি, আলহামদুলিল্লাহ, এতেও উপকার হইছে। সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ, ওনারা আমাগো কথা ভাবতেছে। কিন্তু শুধু চাল দিয়া কি সংসার চলে? তেল, লবণ, ডাল এইসব তো দরকার হয় রান্নার সময়। সেই দিকটা কেউ ভাবে না। আর ২৫ কেজি চাল, ২২ দিনের জন্য খুবই কম। এখনকার দিনে একেকটা পরিবারে ৫-৬ জন মানুষ থাকে। যদি ভিজিএফ চালের পরিমাণ বাড়ানো যাইত, আর কিছু নিত্যপণ্যের ব্যবস্থা করা যাইত, তাইলে আমাগো মতো গরিব জেলেরা একটু শান্তিতে থাকতে পারত।”
চর বেনীনগর পদ্মার পাড়ের জেলে মোহন মন্ডল বলেন, ইলিশ তো দেশের সম্পদ। আমরাই চাই না মা ইলিশ নষ্ট হউক। কিন্তু সংসার তো থামে না, বাচ্চার পড়ালেখা, অসুখ বিসুখ, বাজার খরচ। চাল পেয়ে উপকার হইছে, কিন্তু যদি আরও কিছু সহায়তা, আর বিকল্প কাম-কাজের ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে ভালা হইতো।”
মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুহাম্মদ সিরাজুর রহমান বলেন, “মা ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের এই উদ্যোগ সফল করতে সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবাই যদি নিয়ম মেনে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকে, তাহলে দেশের মৎস্যসম্পদ আরও সমৃদ্ধ হবে। এ কাজে সকলের আন্তরিক অংশগ্রহণই পারে টেকসই ইলিশ উৎপাদন নিশ্চিত করতে।”