রাজবাড়ী জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় জমি চাষের জন্য পাওয়ার টিলারের প্রচলন চোখে পড়ার মতো। আর বর্তমানে হাল চাষে আধুনিক প্রযুক্তির প্রচলন হওয়ার ধীরে ধীরে গ্রামের ঐহিত্য গরু (বলদ) দিয়ে হাল চাষ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে গরু দিয়ে হাল চাষের কদর না থাকায় অনেকেই কর্ম পরিবর্তন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
জানা গেছে, এক সময় বাণিজ্যিক ভাবে কৃষক গরু পালন করতো হাল চাষ করার জন্য। গ্রামের অনেক বাড়িতে শুধু জমিতে হাল চাষ করার জন্য কিছু মানুষ গবাদি পশুর হাল চাষকে পেশা হিসেবে ব্যবহার করত। নিজের সামান্য জমিটুকুর পাশাপাশি অন্যের জমিতে হাল চাষ করে তাদের সংসারের ব্যয় নির্বাহ হতো। গরু দিয়ে হাল চাষে সময় লাগলেও জমি মালিকরা অপেক্ষা করে হলেও পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে হাল চাষের ব্যবস্থা করতো। সিরিয়াল মতো তারা জমিতে হাল চাষ দিয়ে নিত। হালের গরু কিনে দরিদ্র মানুষ জমি চাষ করেই তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে পেতো।
নাম তার আব্দুল জলিল শেখ। বর্তমান বয়স ৮০বছর। রাজবাড়ীর সদর উপজেলা মূলঘর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তিনি বলেন, তখন আমার বয়স ৯/১০ হবে। ছোট বেলায় বাবা-মা মারা যায় আমার। সেই থেকেই চাচার সাথে হাল চাষের কাজ করতাম। বাড়িতে হাল চাষের বলদ গরু ছিল ২ জোড়া। হাল চাষের জন্য দরকার হতো বলদ গরু ১ জোড়া, কাঠ-লোহার তৈরি লাঙ্গল, জোয়াল, চৌঙ্গ(মই), নড়ি (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানো লাঠি), গরুর মুখের টোনা এই লাগতো আমাদের।
তিনি আরো বলেন, আমিই তো প্রায় ২০ বছর আগ থ্যাইকা শরীর খারাপের জন্যে হাল চাষ ছাইরা দিছি। আমরা মাঝে মাঝে জমিতে ধনিচা চাষ করতাম। হাত খানেক লম্বা হলে আমরা লাঙ্গল দিয়ে চাষ দিতাম জমিতে। শিক্ষিত লোকের মুখে শুনছি, ধুনিচা গাছে সবুজ সার হয়। জমির জন্য উপকার। এখন তো আর তা নাই, হইছে নতুন নতুন ম্যাশিন, তাই দিয়ে এখনকার লোকজন চাষাবাদ করে।
এছাড়া জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের চরবালিয়াকান্দি গ্রামের হালচাষী কৃষক ফজলু সেক(ফজো) বলেন, প্রতিদিনে এক বিঘা জমি চাষ করতে পারতাম। বলদ দিয়ে চাষ করতে লাঙ্গল ব্যবহার করতে হতো। লাঙ্গল জমিতে অনেক খানি মাটির নিচ দিয়ে জমি চাষ করা যেত। উপরের মাটি নিচে পড়তো আর নিচের মাটি উপরে। এখন তো আর তা নেই। ম্যাশিনের গন্ধ সয়না শরীরে।
বর্তমানে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি আসায় কৃষি ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য আসছে বলে স্বীকার করেন কৃষকরা। কৃষকরা বলেন, ধীরে ধীরে পাওয়ার টিলারের প্রচলন হওয়ায় বলদ দিয়ে হাল চাষের কদর কমে গেছে। কম সময়ে বেশী জমিতে চাষ দিতে সক্ষম হওয়ায় জমির মালিকরা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করে নিচ্ছে।
একদিকে বর্তমান গরু দিয়ে হাল চাষের কদর না থাকায় অন্য পেশায় গিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন, অন্যদিকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এক দু’বাড়ির কৃষক গরু দিয়ে জমি চাষের পদ্ধতি টিকিয়ে রেখেছেন। হয়তো অল্প দিনের মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে আরো আধুনিক যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতার কারণে একবারেই হারিয়ে যাবে গবাদি পশুর হাল চাষ পদ্ধতি।