রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০২১ ফলাফলে পরাজিত হয়ে মামলা করে দীর্ঘ ৩ বছর পর ইউপি সদস্য পদ ফিরে পেলেন বিএনপি নেতা মো: ফজলুল হক ছোবাহান।
বুধবার (০৯ এপ্রিল) রাজবাড়ী নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: মিলন আলী প্রকাশ্য আদালতে ভোট গণনা শেষে বেসরকারি ভাবে ফজলুল হক ছোবাহানকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদ ফিরে পেয়েছেন।ছোবাহানের পক্ষে আদালতের শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার সোম ও অ্যাডভোকেট সোহাগুর রহমান জুয়েল।
বিজয়ী ফজলুল হক ছোবাহান সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের নিমতলা গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে ও ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১ সালের ২৬শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়ন ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য প্রার্থী মোঃ মাহবুব হোসেন লিটনকে (ফুটবল প্রতীক) ৩৭৭ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সে সময় নির্বাচন কমিশন ভোট গণনা শেষে দাবি করে, মো: ফজলুল হক ছোবাহান (তালা প্রতীক) ৩৬৮ ভোট পেয়েছেন ও মো. জাহাঙ্গীর বিশ্বাস (মোরগ প্রতীক) পেয়েছেন ২৮৫ ভোট। ওই ফলাফলের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর বিশ্বাস ২০২২ সালের ৩১ মার্চ রাজবাড়ী নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় তিনি পুনরায় ভোট গণনার দাবি জানান। চলতি বছরের ৪ মার্চ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফজলুল হক ছোবাহান এ মামলায় পক্ষ হন। বুধবার (৯ এপ্রিল) ধার্য্য তারিখে আদালতে পুনরায় ভোট গণনা হলে ফজলুল হক ছোবাহান ৩৭৬ ভোট পাওয়ায় তাকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন বিচারক।
ছোবাহানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সোহাগুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘প্রকাশ্যে আদালতে গণনা করে মোট এক হাজার ৪৭টি ব্যালট পেপারের মধ্যে এক হাজার ৪৪টি ব্যালট পেপার পাওয়া যায়। তিনটি ব্যালট পেপার পাওয়া যায়নি। গণনাকালে ১৬টি জাল ব্যালট পেপার পাওয়া যায়।
ওই ব্যালট পেপারগুলো হালকা সবুজ রঙের, যা নির্বাচন কমিশন থেকে প্রদত্ত নয়। জাল ব্যালট পেপারে প্রিজাইডিং অফিসারের কোনো প্রকার স্বাক্ষর-সিল নেই। ১৬টি জাল ব্যালট পেপারে ফুটবল প্রতীকে ভোট দেয়া হয়েছে বলে দেখা যায়।
তিনি বলেন, আদালতে ভোট গণনা শেষে ফজলুল হক ছোবাহান তালা প্রতীকে ৩৭৬ ভোট পাওয়ায় তাকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন বিচারক। গণনায় মাহব্বু হোসেন লিটনের ফুটবল প্রতীকে ৩৫৪ ভোট পাওয়া যায় এবং জাহাঙ্গীর হোসেনের মোরগ প্রতীকে পাওয়া যায় ২৮৫ ভোট।
বিজয়ী ইউপি সদস্য মো: ফজলুল হক ছোবাহান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শহীদওহাবপুর ইউনিয়ন ৬ নম্বর ওয়ার্ড বাসী আমাকে তালা প্রতীকে ভোট দিয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত করেন। কিন্তু আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফ্যাসিবাদের দোসর ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন লিটন নির্বাচনে দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বাইরে থেকে ব্যালট পেপার প্রিন্ট করে এনে জাল ভোটের মাধ্যমে নিজেকে বিজয়ী করে। আমি সে সময় তাকে জাল ভোটে বাধা দিলে আমাকে ও আমার বাবাকে মারপিট করা হয়। পরে আমাকে মিথ্যা মামলায় পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানো হয়। আমি ফ্যাসিবাদের দোসর লিটনসহ ভোট চুরির সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদে দায়িত্ব নেয়ার পর নিজের সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ডবাসীর সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ফজলুল হক ছোবাহান।