কেউ নোংরা দেয়াল ঘষে করছে পরিষ্কার, কেউবা সেখানে দিচ্ছে রঙের আস্তর। এক হাতে রং, আর অন্য হাতে তুলি। মনের মাধুরী দিয়ে আঁকছে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী বৃষ্টি আক্তার ও খাতুনে জান্নাত তিথী। তাদের মতো শতাধিক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের রং তুলির আঁচড়ে বর্ণিল হয়ে উঠেছে রাজবাড়ী শহরের বিভিন্ন দেয়াল।
শনিবার(১৭ই আগষ্ট) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের প্রাচীর দেয়ালে শিক্ষার্থীদের রং তুলির আঁকাআঁকির চিত্র চোখে পড়ে।
দেখা গেছে, গত একমাস আগেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে দেয়ালগুলোতে সিনেমা হল, কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপন সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার একমাত্র মাধ্যম ছিলো, সেটি গত কয়েক দিনে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি বদলে দিয়েছে সৌন্দর্য্য।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতেই রাজবাড়ীতে কলেজগামী শিক্ষার্থীরা জেলা শহরের কলেজের বিভিন্ন দেয়ালে ছবি আঁকা ও দেয়াল লিখনে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। আর সেই দেয়ালগুলোই এখন পরিণত হয়েছে রঙিন ক্যানভাসে। দেয়ালগুলোতে শিক্ষার্থীদের রং তুলির ছোয়ায় ফুটে ব্রিদোহী স্লোগানের পাশাপাশি সম্প্রীতির আহ্বান।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রোদ মাথায় নিয়ে মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা চিত্রাঙ্কন করছে। কেউ দেয়ালে লাগানো পোস্টার তুলছেন, কেউবা তুলি দিয়ে দেয়ালে রং করছেন। সেই রঙে অন্য শিক্ষার্থীরা দেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা, শিক্ষামূলক ও উপদেশমূলক বিভিন্ন বাণী লিখেছে। শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগেই রাজবাড়ীর সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ, টাউন মক্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোতে আঁকতে শুরু করে যা শোভা পাচ্ছে। চলার পথের শত শত পথিকের মন কাড়ছে। অনেকেই একটু থেকে চোখ মেলে দেখে নিচ্ছেন।
রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী বৃষ্টি আক্তার বলেন, পূর্বের অভিজ্ঞতা না থাকায় ভয় নিয়েই আগ্রহের সাথে রং তুলি হাতে তুলে নেই। সর্বশেষ যে কাজগুলো রং তুলিতে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি, এটাই আমাদের পাওয়া।
একই ক্লাসের অপর ছাত্রী খাতুনে জান্নাত তিথী বলেন, যেহেতু আমাদের কথাটা হচ্ছে নতুন বাংলা। সেহেতু আমরা চাই, সব রকম ভেদাভেদ ভুলে সবাই মিলে একটা নতুন দেশ গড়ে তুলি।
একাদশ শ্রেণীর জান্নাতুল মাওয়া অদিতা বলেন, প্রথম দিনের কাজটা নিজেদের উদ্যাগে করায় কলেজের শিক্ষকরা আমাদের কাজে খুশি হয়ে গ্রাফিতি আঁকতে সহযোগিতা করেছে।
সড়কে চলাচলরত পথচারীরা বলছেন , একসময় জেলা শহরের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালগুলো বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে ছেয়ে নোংরা পরিবেশের সৃষ্টি করেছিলো। সেই দেয়ালগুলোতে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে নতুন রুপে ফিরে এসেছে। আমাদের সকল অভিভাবকদের উচিত-শিক্ষার্থীদের এ সকল কাজে সহযোগিতা করা। শুধু দেয়ালে গ্রাফিতি নয়, এ শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেও দায়িত্ব পালন করে দেশের সকল স্তরে প্রশংসিত হয়েছে।