ঢাকা ০৩:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo বালিয়াকান্দিতে মোবাইল কোর্টে দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা Logo রোগীর থালায় নেই পুষ্টি, ওষুধেও গরমিল! Logo বালিয়াকান্দিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত Logo সবুজ রাজবাড়ীর স্বপ্নে আনসার-ভিডিপির ৫০০ চারা রোপন Logo রাজবাড়ীতে হাসপাতালে অজ্ঞাত বৃদ্ধা নারীর মৃত্যু: পরিচয় শনাক্তে পুলিশি তৎপরতা Logo রাজবাড়ীতে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় আলোচনা ও দোয়া মাহফিল Logo বালিয়াকান্দিতে বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ Logo বালিয়াকান্দিতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিজয় র‌্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত Logo রাজবাড়ীতে পদ্মা নদী ভাঙন ১০০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ Logo রাজবাড়ীতে ৩১ শিক্ষার্থী পেল এসইডিপি সম্মাননা

নববধূর ছদ্মবেশে দেড় মাস! নববধু ‘সামিয়া’ আসলে পুরুষ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন মাহমুদুল হাসান শান্ত। দেড় মাস সংসারও করেছেন। তবে অবশেষে এক বিস্ময়কর সত্য সামনে আসে—তার ‘নববধূ’ সামিয়া আসলে একজন পুরুষ।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কথিত সামিয়ার প্রকৃত নাম মো. শাহিনুর রহমান। তিনি চট্টগ্রামের আমতলা ঈদগাহ বৌবাজার এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে।

ঘটনাটি গত ২৫ জুলাই (শুক্রবার) সন্ধ্যায় প্রকাশ্যে আসার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা আলোচনার ঝড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের হাউলি কেউটিল গ্রামের মাহমুদুল হাসান শান্তর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় ‘সামিয়া’ নামে একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। অনলাইনেই চলতে থাকে কথোপকথন ও প্রেমের সম্পর্ক।

‘সামিয়া’ পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন চট্টগ্রামের আমতলা ঈদগাহ বৌবাজার এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে মো. শাহিনুর রহমান। প্রেমের একপর্যায়ে ৭ জুন হঠাৎ করে শাহিনুর ওরফে সামিয়া শান্তর বাড়িতে চলে আসেন। পরিবার বিষয়টি মেনে নেয় এবং স্থানীয়দের উপস্থিতিতে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিয়ের পর শান্তর পরিবারের সঙ্গেই বসবাস করছিলেন সামিয়া। চলাফেরা, আচার-আচরণ ও ব্যবহারে তিনি নিজেকে একজন নারী হিসেবে উপস্থাপন করতে সফল হন। তবে বিয়ের পর দাম্পত্য সম্পর্কে ঘনিষ্ঠ হতে গেলে সামিয়া নানা অজুহাতে তা এড়িয়ে যেতেন। বলতেন, “আমি অসুস্থ, ডাক্তার নিষেধ করেছে।”

দীর্ঘদিন এভাবে চলার পর শান্তর পরিবার ও নিজেও সন্দেহে পড়েন। শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে নিশ্চিত হওয়া যায়, ‘সামিয়া’ আসলে একজন পুরুষ। সত্য সামনে আসতেই পুরো এলাকায় হইচই পড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে এ সংবাদ। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শনিবার সকালে শান্তর পরিবার শাহিনুরকে তার নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

শান্ত বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ওর ব্যবহার এমন ছিল যে, কোনো সন্দেহই হয়নি। আমরা কখনো ধারণাও করিনি এমন প্রতারণার শিকার হবো।”

শান্তর মা মোছা. সোহাগী বেগম বলেন, বিয়ের পর ‘সামিয়া’ নববধূর মতোই বসবাস করতে থাকে। রান্নাবান্না, কথাবার্তা, চালচলনে পুরোপুরি একজন নারীর মতোই ছিলো। “একজন পুরুষ মানুষ বউ সেজে এতদিন আমাদের বাড়িতে ছিল আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। অভিনয় করে পুরো পরিবারকে ভুলিয়ে রেখেছিল।”

এ বিষয়ে মো. শাহিনুর রহমান ওরফে সামিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনে বলেন, “আমি স্বীকার করি, শান্তর সঙ্গে যা করেছি তা অন্যায়। কিন্তু আমার হরমোনজনিত সমস্যা রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই আমি নিজেকে মেয়ে হিসেবে কল্পনা করি। মেয়েদের মতো পোশাক পরতে, সাজতে ভালো লাগে। এজন্যই এই জীবন বেছে নিয়েছিলাম।”

ছোট ভাকলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ ছেলে মানুষে মেয়ে সেজে বিয়ে ও সংসার বিষয়টি পরিষদের এক মেম্বারের মুখ থেকে শুনেছি।’ তবে এ নিয়ে কেউ আমার কাছে আসেনি।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়রা বলছেন, সামাজিক বিশ্বাস ও পরিচয়ের এমন প্রতারণা শুধু এক পরিবারকে নয়, গোটা সমাজকেই নাড়া দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, মানসিক স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ পরিচয়ের জটিলতা বিষয়ক সচেতনতা জরুরি হয়ে পড়েছে।

ট্যাগস :

বালিয়াকান্দিতে মোবাইল কোর্টে দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা

নববধূর ছদ্মবেশে দেড় মাস! নববধু ‘সামিয়া’ আসলে পুরুষ

আপডেট সময় ০৮:১৯:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন মাহমুদুল হাসান শান্ত। দেড় মাস সংসারও করেছেন। তবে অবশেষে এক বিস্ময়কর সত্য সামনে আসে—তার ‘নববধূ’ সামিয়া আসলে একজন পুরুষ।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কথিত সামিয়ার প্রকৃত নাম মো. শাহিনুর রহমান। তিনি চট্টগ্রামের আমতলা ঈদগাহ বৌবাজার এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে।

ঘটনাটি গত ২৫ জুলাই (শুক্রবার) সন্ধ্যায় প্রকাশ্যে আসার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা আলোচনার ঝড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের হাউলি কেউটিল গ্রামের মাহমুদুল হাসান শান্তর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় ‘সামিয়া’ নামে একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। অনলাইনেই চলতে থাকে কথোপকথন ও প্রেমের সম্পর্ক।

‘সামিয়া’ পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন চট্টগ্রামের আমতলা ঈদগাহ বৌবাজার এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে মো. শাহিনুর রহমান। প্রেমের একপর্যায়ে ৭ জুন হঠাৎ করে শাহিনুর ওরফে সামিয়া শান্তর বাড়িতে চলে আসেন। পরিবার বিষয়টি মেনে নেয় এবং স্থানীয়দের উপস্থিতিতে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিয়ের পর শান্তর পরিবারের সঙ্গেই বসবাস করছিলেন সামিয়া। চলাফেরা, আচার-আচরণ ও ব্যবহারে তিনি নিজেকে একজন নারী হিসেবে উপস্থাপন করতে সফল হন। তবে বিয়ের পর দাম্পত্য সম্পর্কে ঘনিষ্ঠ হতে গেলে সামিয়া নানা অজুহাতে তা এড়িয়ে যেতেন। বলতেন, “আমি অসুস্থ, ডাক্তার নিষেধ করেছে।”

দীর্ঘদিন এভাবে চলার পর শান্তর পরিবার ও নিজেও সন্দেহে পড়েন। শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে নিশ্চিত হওয়া যায়, ‘সামিয়া’ আসলে একজন পুরুষ। সত্য সামনে আসতেই পুরো এলাকায় হইচই পড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে এ সংবাদ। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শনিবার সকালে শান্তর পরিবার শাহিনুরকে তার নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

শান্ত বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ওর ব্যবহার এমন ছিল যে, কোনো সন্দেহই হয়নি। আমরা কখনো ধারণাও করিনি এমন প্রতারণার শিকার হবো।”

শান্তর মা মোছা. সোহাগী বেগম বলেন, বিয়ের পর ‘সামিয়া’ নববধূর মতোই বসবাস করতে থাকে। রান্নাবান্না, কথাবার্তা, চালচলনে পুরোপুরি একজন নারীর মতোই ছিলো। “একজন পুরুষ মানুষ বউ সেজে এতদিন আমাদের বাড়িতে ছিল আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। অভিনয় করে পুরো পরিবারকে ভুলিয়ে রেখেছিল।”

এ বিষয়ে মো. শাহিনুর রহমান ওরফে সামিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনে বলেন, “আমি স্বীকার করি, শান্তর সঙ্গে যা করেছি তা অন্যায়। কিন্তু আমার হরমোনজনিত সমস্যা রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই আমি নিজেকে মেয়ে হিসেবে কল্পনা করি। মেয়েদের মতো পোশাক পরতে, সাজতে ভালো লাগে। এজন্যই এই জীবন বেছে নিয়েছিলাম।”

ছোট ভাকলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ ছেলে মানুষে মেয়ে সেজে বিয়ে ও সংসার বিষয়টি পরিষদের এক মেম্বারের মুখ থেকে শুনেছি।’ তবে এ নিয়ে কেউ আমার কাছে আসেনি।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়রা বলছেন, সামাজিক বিশ্বাস ও পরিচয়ের এমন প্রতারণা শুধু এক পরিবারকে নয়, গোটা সমাজকেই নাড়া দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, মানসিক স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ পরিচয়ের জটিলতা বিষয়ক সচেতনতা জরুরি হয়ে পড়েছে।