রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের তালাবদ্ধ ঘর থেকে ফারিহা বিশ্বাস জেরিন (২০) নামে এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১০ই এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫টায় সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের বড়ভবানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

নিহত জেরিন বসন্তপুর ইউনিয়নের বড় ভবানীপুর গ্রামের মো: আকির হোসেন বিশ্বাস ও তৃপ্তিয়ারা খাতুনের মেয়ে। তার বাবা ঢাকায় একটি প্লাস্টিক কোম্পানিতে এবং মা গোয়ালন্দ উপজেলার চরবরাট শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা পদে চাকরি করেন।

জানা গেছে, ১০ই এপ্রিল বিকেল ৩ টার দিকে জেরিন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দুটি পোস্ট করেন। একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘সবকিছু মিলায়ে আমি আর নিতে পারলাম না। মাফ করে দিও আমাকে। বাবা মায়ের ব্যর্থ সন্তান হিসেবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলাম। যাদের সাথে অন্যায় করছি সবাই মাফ করে দিও।’ আরেকটি পোস্টে জেরিন লেখেন, ‘বিদায় সুন্দর পৃথিবী’।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সোয়া ৩ টার দিকে ফারিহা বিশ্বাস জেরিনের ফেসবুকে আত্মহত্যা সংক্রান্ত পোস্ট দেখে তার এক প্রতিবেশী বান্ধবী তার মাকে ফোন দেন। তবে তার মা জেরিনকে বাড়িতে একা রেখে সকালে স্কুলে গেছে বলে জানান। এরপর তার ওই বান্ধবী স্থানীয় কয়েজনকে সঙ্গে নিয়ে জেরিনদের বাড়িতে গিয়ে ঘর বাইরে থেকে তালা দেওয়া দেখতে পান। পরে তারা বাড়ির পেছনে গিয়ে দেখেন সবকটি জানালা খোলা। জানালা দিয়ে তারা ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেচানো অবস্থায় জেরিনের মরদেহ দেখতে পান।

এসময় তার মাকে ও পুলিশকে খবর দেয়া হলে তার মা বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে স্কুল থেকে এসে ওড়না কেটে মরদেহটি নিচে নামান। বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে পুলিশ এসে মরদেহটি উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন।

জেরিনের মা তৃপ্তিয়ারা খাতুন বলেন, ‘আমার মেয়ে ২০২৪ সালে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। আগামী ১২ এপ্রিল তার কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। তবে সে ঢাকায় যেতে রাজী হচ্ছিলনা। আমরা চাচ্ছিলাম যে সে ভর্তি পরীক্ষা দিক। আমি এবং ওর বাবা ওকে অনেক বুঝিয়েছি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। এই বিষয়টি নিয়ে ওর একটু মন খারাপ ছিল।’

তিনি আরো বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টার দিকে আমি আমার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে আবিদকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে চলে যাই। তখন জেরিন ঘুমাচ্ছিল। যাওয়ার সময় আমি ঘর বাইরে থেকে তালা দিয়ে যাই। তালার একটি চাবি জেরিনের কাছেও ছিল। দুপুর ১ টা ৫২ মিনিটে আমি জেরিনকে ফোন দিয়ে জানতে চাই খেয়েছে কিনা। তখন সে আমাকে বলে একটু পর গোসল করে তারপর খাবে। বিকেল সোয়া ৩ টার দিকে জেরিনের এক বান্ধবী আমাকে বলে জেরিন নাকি ফেসবুকে আত্মহত্যার স্ট্যাটাস দিয়েছে। তখন আমি জেরিনের নম্বরে ফোন করলে সে ফোন রিসিভ করে না। এর ১৫ মিনিট পর বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে জেরিনের বান্ধবী আমাকে ফোন করে বলে, জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে ঘরের আড়ার সাথে জেরিনের লাশ ঝুলছে। এ খবর শুনে আমি দ্রুত বাড়িতে এসে বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে তালা খুলে ঘরে ঢুকে ওড়না কেটে জেরিনের লাশ নিচে নামাই।’
তৃপ্তিয়ারা খাতুনের ধারণা বাড়িতে একা থাকার সুযোগে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে কি কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারে তা বলতে পারছেন না বলে দাবি করেন তিনি।

রাজবাড়ী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাহমুদুর রহমান বলেন, পুলিশ নিহতের মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো প্রক্রিয়া চলছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’